ভিখারী সাহেব গল্প প্রশ্ন উত্তর

প্রিয় ছাত্রছাত্রী আজকের বিষয় হচ্ছে প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় ভিখারী সাহেব গল্প প্রশ্ন উত্তর নিয়ে হাজির হয়েছি । ভিখারী সাহেব গল্প প্রশ্ন উত্তর নিয়ে হাজির হওয়ার কারণ হচ্ছে যে এটা ঠিক রকম গুগল এ পাওয়া যায়না । তো ভিখারী সাহেব গল্প প্রশ্ন উত্তর ( প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় ) অতিসংক্ষিপ্ত/সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর, ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্ন উত্তর , রচনাধর্মী/ বড়ো প্রশ্ন উত্তর ।

 

ভিখারী সাহেব গল্প প্রশ্ন উত্তর

ভিখারী সাহেব গল্প প্রশ্ন উত্তর | অতিসংক্ষিপ্ত/সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর ( প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় )

 

1. ভিখারি সাহেব গল্পে ভিখারি কাকে বলা হয়েছে ?

উত্তর : ব্যাটারি সাহেব গল্পে হ্যানরিকে ভিখারি বলা হয়েছে । যা গল্পে বক্তার কাছে টুপি খুলে ইংরেজিতে বলেছিল যিশুখ্রিস্টের নামে আমাকে একটি পয়সা দিন।

২। ভিখারী সাহেবের পোশাকের বর্ণনা দাও। 

উঃ লোকটির পরণের পোশাক ছিল মূল্যবান, কিন্তু খুব পুরাতন, সিল্ক হ্যাট, বস্ত্রাদি ও অন্যান্য তদনুরূপ। মুখে অত্যন্ত দামি হাভানা চরুট।

৩। ভিখারী সাহেব’ গল্পে পরিচ্ছেদ সংখ্যা কত ?

উঃ চারটি পরিচ্ছেদ আছে ভিখারী সাহেব গল্পে।

৪। গল্পের বক্তা কী কাজ করতেন?

উঃ কোলিয়ারিতে উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিলেন।

৫। তার চাপরাশির নাম কী?

উঃ তাঁর চাপরাশির নাম হরি তেওয়ারি।

৬। “হুকুম হয় তো এই গাছের তলাতেই বিছানা বিছাই।”-কে বলেছে? কাকে বলেছে? কেন বলেছে?

উ: চাকর হরি তেওয়ারি তার মনিবকে বলেছে। যিনি এই গল্পের বক্তা। তারা দুজনেই স্টেশনে এসেছিল ট্রেন ধরতে, কিন্তু ট্রেন পায়নি; ফলে সেই সময় থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রেনের প্রতিক্ষায় যে দীর্ঘ সময়টা তারা একটি প্রকাণ্ড নিমগাছের নীচে ফুরফুরে চৈতী হাওয়ায় বিছানা পেতেছিল।

৭। “আমার মনে একটা মতলব আসিল ” – কোন গল্পের অংশ? তাঁর মনে কী মতলব এসেছিল?

উ: এই উক্তিটি ‘ভিখারী সাহেব গল্পের অংশ। তাঁর মতলব ছিল হেনরিকে বাঙালি করার। অনেকে বাঙালিই তো সাহেব হয়েছে, একটা সাহেবকে বাঙালি করে দেখলেই হয়। একে কয়লাখনিতে নিয়ে গিয়ে কুলির সর্দার করবে। ভাত, ডাল খাওয়াবে, ধুতি চাদর পরিয়ে রাখবে।

৮। ও ইয়েস বাবু, আমি বাঙালি হইব।”-কে বলেছে? এবং কেন বলেছে?

উঃ গল্পকারের প্রস্তাবে হেনরি মহা উৎসাহে সম্মতি জানিয়েছে। তার কারণ, হেনরি মনে করে ইংরেজরা বাঙালি-কে অত্যন্ত ঘৃণা করে। হেনরি নিজে বাঙালি হয়েছে স্বজাতির পাপের কতকটা প্রায়শ্চিত্য করবে এবং জগতকে দেখাবে যে, বাঙালিরা হেয় পদার্থ নয়।

৯। বাবু তবে আমার যাওয়া হইলনা।”-কে কাকে বলেছে? কেন বলেছে?

উঃ হেনরি গল্পকারকে বাবু সম্বোধন করে একথাটি বলেছে। না যাওয়ার কারণ হল, হাভানা চরুট ভালো হাভানা চরুট চাই। গল্পকার বলেছিলেন, বোধ। হয় পাওয়া যায় না’—তার উত্তরে হেনরি উক্ত কথাটি বলেছেন

১০। এই গল্পের দুটি বাঙালি চরিত্র ও দুটি ইংরেজ চরিত্রের নাম লেখ।

উঃ দুটি বাঙালি চরিত্র হল গল্পকার নিজে ও তাঁর মেয়ে গিরিবালা ও দুটি ইংরেজ চরিত্র হল—হেনরি ও মরিসন।

১১। মরিসন কে?

উ: গল্পকারের ইংরেজ বন্দু। যিনি মাঝে মাঝে গল্পকারের সাথে গল্প করতে আসেন।

১২। স্ট্যান্ড ম্যাগাজিন কী? এখানে কে কী পাঠিয়েছিলে?

উ: ‘স্ট্যান্ড ম্যাগাজিন’ হল ইংল্যান্ডের একটি পত্রিকা, তার ‘কিউরিয়াসিটি’ কলমে হেনরির বাঙালি হওয়ার ছবি পাঠানো হয়েছিল। ছবিটির নীচে লেখা ছিল- ‘বাঙালি পরিচ্ছদে ইংরেজ।

১৩। হেনরিকে গিরিবালা কী বলে ডাকে?

উ: গিরিবালা তাঁকে কাকা বলে ডাকতেন। কিন্তু হেনরির বয়স যেহেতু ষাট বছরেরও বেশি, তাই তার বাবা তাকে বলেছিল জ্যাঠা নয়তো মামা বলে ডাকতে। একথা শোনার পর গিরিবালা হেনরি দাদা বলে ডাকত।

১৪। কোলিয়ারির নেটিভ ডাক্তারবাবুটি চিকিৎসা করতে ছিলেন— কোন গল্পের অংশ? কার চিকিৎসা করছিলেন ডাক্তারবাবু? তার কী হয়েছিল?

উত্তর: উক্ত লাইনটি ‘ভিখারী সাহেব’ গল্পের অংশ । গল্পকারের মেয়ে গিরিবালার জ্বর হওয়ায় ডাক্তারবাবু চিকিৎসা করছিলেন।

১৫। Now, I won’t allow that “কে, কাকে কেন বলেছিল?

উ: রাণীগঞ্জের ডাক্তারবাবু একটি ওষুধ গিরিবালা-কে দিতে চাওয়ায় হেনরি একথা বলেছিল। হেনরির মনে হয়েছিল এই ওষুধ প্রয়োগ করলে হাত-পা শীতল হয়ে যাবে এবং মারাও পড়তে পারে।

১৬। এই ওষুধ দেওয়ার পর গিরিবালার কী হয়েছিল?

উ: পাঁচ মিনিটের মধ্যে হু হু করে টেম্পারেচার নেমে যেতে থাকলো, ডাক্তারের মুখ শুকিয়ে গেল, গিরিবালার হাত-পা শীতল হয়ে আসছে দেখে তার মা কেঁদে উঠলেন, ডাক্তার বাইরে চলে গেলেন।

১৭। “এ মেয়েকে যদি বাঁচাইতে পারো, তো এ মেয়ে তোমার।”-কে, কাকে বলেছিল? সে কি সত্যিই বাচাতে পেরেছিল?

উত্তর : গিরিবালা মা হেনরিকে একথা বলেছিল। হেনরি অতি দ্রুত একটা ওষুধ প্রস্তুত করে গিরিবালার মুখে ঢেলে দিল, ওষুধ ঠোঁটের কোণ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল, তখন হেনরি সূচের মতো কী একটা যন্ত্র বের করে সেই ওষুধ গিরির দেহে স্থানে স্থানে বিদ্ধ করে দিল। ফলস্বরূপ পাঁচ মিনিট পরে ঘিরিবালার শরীরের উত্তাপ বৃদ্ধি পেল এবং ঐ যাত্রায় সে বেঁচে গেল।

১৮। হেনরি তোমার কী হয়েছে বলো”–এ প্রশ্ন কার? হেনরি এর কী উত্তর দিয়েছিল?

উঃ এ প্রশ্ন গল্পকারের। হেনরি বলেছিল—“বাবু আমি আমার ভূত জীবনের ইতিহাস ভাবি, একটু একটু করে আমার সব মনে পড়িতেছে। আমি মাঝে পাগল হয়ে যাই, আবার ভালো হই। এবার আমার ভালো হবার সময় আসিয়াছে।”

১৯। হেনরির আসল নাম কী? সে কে?

উঃ হেনরির আসল নাম—স্যার হেনরি রবিনসন। সে একজন সজ্জন ব্যক্তি। ইংল্যান্ডের কমনসভায় বক্তৃতা করে দেশবাসীকে মুগ্ধ করে দিয়েছিল।

২০। হেনরি ভিখারী হল কী করে?

উঃ স্যার হেনরি লন্ডন সমাজের একজন গণ্যমান্য লোক, তাঁর উন্মাদ ব্যাধি আছে। গতবছর শীতে রোগমুক্ত অবস্থায় বন্ধুদের সঙ্গে ভারতবর্ষে ভ্রমণ করতে আসে। দুমাস পরে বন্ধু সঙ্গ ত্যাগ করে অন্তস্থান হয়ে যান। সেই থেকে স্যার হেনরি ভিখারী হেনরিতে পরিণত হয়।

২১। হেনরির আসল পরিচয় কীভাবে জানা যায় ?

উঃ গল্পকারের ইংরেজ বন্ধু মরিসন্ স্ট্যান্ড ম্যাগাজিনে তার ছবি ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস পাঠালে ম্যাগাজিনের সম্পাদক কিউরিওসিটি পৃষ্ঠায় ছেপেছিলেন। এই পত্রিকা দেখে তাঁর ভাতুষ্পুত্র খোঁজ খবর করেছিল।

২২. না না তার অপেক্ষা তুমি আমাকে ঢের বেশি মূল্যবান জিনিস দিয়াছ।”-কে বলেছে? কাকে বলেছে? সেই মূল্যবান জিনিস কী?

উঃ হেনরি গল্পকারের এক প্রশ্নের উত্তরে এই কথাগুলি বলেছেন। সেই মূল্যবান জিনিস হল, গল্পকারের মেয়ে গিরিবালা। গিরিবালাকে হেনরির হাতে তুলে দেওয়া।

২৩। হেনরি গিরিবালাকে নিয়ে কী করতে চায়?

উঃ হেনরি গিরিবালাকে বিলাতে নিয়ে গিয়ে প্রথম শ্রেণির বিদ্যালয়ে ভর্তি করে, ভালো করে লেখা পড়া শিখিয়ে কোনও সম্ভ্রান্ত বংশীয়, সৎচরিত্র, সুশিক্ষিত লন্ডন প্রবাসী বাঙালি যুবকের সঙ্গে গিরিবালার বিয়ে দিতে চেয়েছিল।

২৪। গিরিবালা কি শেষ পর্যন্ত হেনরির সাথে যেতে পেরেছিল?

উঃ হেনরির ভ্রাতুষ্পুত্র একমাস পর এসে হেনরিকে বিলাতে নিয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত গল্পকার বাজি হলেও তাঁর স্ত্রী কিছুতেই সম্মতি না দেওয়ায় গিরিবালাকে তিনি কিছুতেই সাথে নিয়ে যেতে পারেননি।

২৫। বেথুন স্কুল ও ব্রা পরিবারের কথা কোন গল্পে আছে?

উ: ‘ভিখারী সাহেব’ গল্পে আছে।

ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

ভিখারী সাহেব গল্প প্রশ্ন উত্তর | ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্ন উত্তর | ( প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় )

 

১। তার উপরকার …কিছুই ছিল না _ ব্যাখ্যা করো

 

উত্তর : আলোচ্য অংশটি গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘ভিখারী সাহেব’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

স্টেশনে পৌঁছিবামাত্র ট্রেন ছেড়ে দেওয়ায় লেখক ট্রেনে উঠতে পারলেন না, অতএব বাধ্য হয়ে পরবর্তী ট্রেনের জন্যে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া তাঁর আর কোন উপায় থাকল না। স্টেশনে ওয়েটিং রুম থেকে নিকটবর্তী নিমগাছের স্নিগ্ধ ছায়ায় বিছানা পেতে বিশ্রাম নেবার ব্যবস্থা করল তাঁর বহুদিনের চাকর হরি তেওয়ারি। সে মনিবের আরামের জন্য গুড়গুড়িতে জল পাল্টিয়ে দিয়ে তামাক সাজিয়ে আনবার জন্য চলে গেল। ঠিক সেই সময় একজন দীর্ঘাকৃতি বৃদ্ধ সাহেব লেখকের বিছানার নিকটে এসে লেখককে সম্মান দেখাবার জন্য মাথা হতে টুপি খুলল এবং ইংরেজীতে বলল, “যীশুখ্রীষ্টের নামে আমাকে একটি পয়সা দিন।’

আরোও পড়ুন ‘ _ অভাগীর স্বর্গ গল্প প্রশ্ন উত্তর

হঠাৎ এই অভিনব আগন্তুককে দেখে লেখক ভালো করে তাকে দেখলেন। লোকটির পরনের বস্ত্রাদি নেহাত ভিখারীসুলভ নয়, তা মূল্যবান কিন্তু খুব পুরনো। তার মাথার টুপিটি কালো সিদ্ধ কাপড়ে তৈরি, কিন্তু সেই কালো রং দীর্ঘদিনের ধুলার আস্তরণে ঢেকে গেছে। এমনকি তা যে সিল্ক তাও কষ্ট করে বোঝা যায়। অন্যান্য জামা-কাপড়ের অবস্থাও সেরূপ। সাহেব বলে তার জামা-কাপড়ের কোন ত্রুটি ছিল না। তাই যদিচ ভিখারী তবুও জাতীয় পোশাক-পরিচ্ছদ, তা যতই পুরাতন ও বিবর্ণ হোক না কেন, সে ঠিকমত বজায় রেখেছে— ধূলিধূসরিত জামার উপরে কলার এবং নেকটাই পরিতে সে ভোলে নি। তার দরিদ্র অবস্থার সঙ্গে নিখুঁত সাহেবী বেশভূষার যে অসঙ্গতি, লেখক সেই অসঙ্গতিটুকুকে দেখিয়েই একটি করুণামিশ্রিত মার্জিত পরিহাস করেছেন। যাকে কেন্দ্র করে এই গল্পটি দানা বেঁধে উঠেছে সেই ভিখারী সাহেবরূপী হেনরি, যিনি আসলে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টের বিশিষ্ট সদস্য সার হেনরি রবিদন, তার প্রথম আবির্ভাবের মধ্যে যে অসঙ্গতি, আলোচ্য অংশটিতে সেই প্রসঙ্গতির কথাই প্রকাশ করা হয়েছে।

 

২। আমাদের জাতি….. হেয় পদার্থ নহে… ব্যাখ্যা কর

 

উত্তর : সূত্র পূর্ববৎ ভিখারী সাহেবটি খেতে পায় না, সে পথে পথে ঘুরে বেড়ায় শুনে লেখক।

তাকে বাঙ্গালীর বেশভূষা পরিয়ে বাঙ্গালী সাজিয়ে আপনার গৃহে স্থান দিতে পারেন এই প্রস্তাবে উক্ত ভিখারী সাহেবটির কিরূপ প্রতিক্রিয়া হল এখানে তারই মুখ দিয়া তা বলা হয়েছে। ট্রেন ধরতে না পেরে কাছের নিমগাছের ছায়ায় বিছানা পেতে বিশ্রাম করবার কালে লেখক আকস্মিকভাবে এক ভিখারী বেশী সাহেবের সাক্ষাৎ পেলেন। সাহেবের নাম হেনরি, সে তার পদবী জানে না, তার মাতা-পিতা স্ত্রী-পুত্র কেউ নেই, আশ্রয় নেই, ভিক্ষা করে কালাতিপাত করে। বহু পুরাতন হলেও সাহেব-সুলভ বেশভূষার পারিপাট্য আছে এবং মূল্যবান হাভানা চুরুট যায়। এই প্রকার অদ্ভুত সাহেবকে বাঙ্গালীর পোশাক পরিয়ে, বাঙ্গালীর ডাল-ভাত খাইয়ে একটি ‘অভিনব দর্শনীয়, পদার্থে রূপান্তরিত করবার এক দুর্দমনীয় স্পৃহা লেখককে পেয়ে বসল। লেখক হেনবিকে তার মতলবের কথা জানালেন। সেও মহা উৎসাহে বাঙ্গালী হতে রাজী হল। তার এই প্রকার অভিনব ব্যবস্থায় রাজী হবার কারণও সে লেখককে জানান। হেনরি বলল যে, জাতি হিসাবে ইংরেজ একটি পাপ কাজ করে থাকে, সেটি হইল তাদের বাঙ্গালী বিদ্বেষ। ইংরেজরা বাঙ্গালীকে সহানুভূতির সহিত দেখে না, পরন্তু খুবই ঘৃণা করে। এই মহাপাপ হতে ইংরেজগণ পরিত্রাণ পারে পারে একমাত্র প্রায়শ্চিত্তের দ্বারা। সুতরাং হেনরি সেই প্রায়শ্চিত্ত করে তার স্বজাতিকে পাপ হতে রক্ষা করবে। সেই প্রায়শ্চিত্ত হচ্ছে প্রথমত, ইংরেজ হয়েও বাঙ্গালী হওয়া, বাঙ্গালীদের পোশাক পরিচ্ছদ পরে বাঙ্গালী খাদ্যে অভ্যস্ত হলেই সেই প্রায়শ্চিত্ত সম্পূর্ণ হবে। দ্বিতীয়ত, ইংরেজ এতদিন যাদের ঘৃণা করে আসছে এবং এখনও করছে, সেই বাঙ্গালীরাও সে সামান্য নহে, তারা যে তুচ্ছ ও হেয় করবার মতো জাতি নয়, সমগ্র বিশ্বে এটার প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করা দরকার। হেনরি এই দুইটি কার্যই করবে। সুতরাং এই দুই মহৎ কার্য করবার সুযোগ অযাচিতভাবে পেয়ে গেছে বলেই সে অতি উৎসাহে লেখকের সঙ্গে তার বাড়ি যেতে রাজী হল। এই সামান্য কথা কটির মধ্য দিয়ে হেনরির চরিত্রে মহত্ব ধরা পড়েছে। একদিকে যেমন তার গভীর স্বজাতিপ্রীতি প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি অপরদিকে পরজাতি (অর্থাৎ বাঙ্গালী)-সহিষ্ণুতা এবং ঔদার্যও প্রকাশ পেয়েছে। সে যে সত্যকার ভিখারীমাত্র নয়, ভিখারীবেশের অন্তরালে অন্য একটি উদার ও মহৎ মানুষ রয়েছে তার আভাস এই অংশটিতে পাওয়া যায়।

 

৩। তথাপি কথাটা নিতান্ত ….পরিচয় দিল … ব্যাখ্যা কর

 

উত্তর। সূত্র পূর্ববৎ। কন্যা গিরিবালা আরোগ্যলাভের পর হেনরির চালচলনের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করে হেনরিকে লেখক প্রশ্ন করায় জানলেন যে, সে মাঝে মাঝে পাগল হয়ে যায় এবং এখন তার পাগল অবস্থা হতে মুক্তিলাভের সময় এসেছে, অর্থাৎ সে এখনও পাগলই আছে। উত্তর শুনে লেখকের মনে কি প্রকার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হল, আলোচ্য অংশে তাই বর্ণিত হয়েছে।

গিরিবালা সুস্থ হয়ে উঠলে হেনরির মধ্যে লেখক কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন। হেনরি কুলির সর্দারি করা ছেরে দিয়েছে। আগে সে হাভানা ফুরাইনার যথেষ্ট আগেই হাভানা আনিয়ে রাখিত। কিন্তু এখন দুইদিন হল চুরুট ফুরিয়ে গেছে অথচ যে হাভানা আনবার জন্য চাপরাসিকে কলিকাতায় পাঠায় নি। এখন সে ম্লানমুখে সর্বদাই কি যেন ভাবে, সব সময়েই কেমন যেন তাকে অন্যমনস্ক লাগে। কেবল লেখকের কন্যা গিরিবালা নিকটে আসলেই তার মনের অন্ধকার কেটে যায়, তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। হেনরি সর্বদা কি ভাবছে-লেখক একদিন এই প্রশ্ন করার হেনরি উত্তর দিল যে সে তার অতীত জীবনের ইতিহাস ভাবে। সে মাঝে মাঝে পাগল হয়ে যায় এখন তার ভালো হবার অর্থাৎ পাগলামি কেটে যাবার সময় এসেছে। এখন তার অতীত জীবনের কথা একটু একটু করে সব মনে পড়ছে। হেনরির এই স্পষ্ট উত্তরে লেখক যৎপরোনারি বিস্মিত হলেন।

রচনাধর্মী/ বড়ো প্রশ্ন উত্তর | ভিখারী সাহেব গল্প প্রশ্ন উত্তর

ভিখারী সাহেব গল্প প্রশ্ন উত্তর |রচনাধর্মী/ বড়ো প্রশ্ন উত্তর | ( প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় )

 

২। আমি ভাবিলাম, পাগলই বটে। নহিলে এত সহর উহার ভাবপরিবর্তন হয় কেন?” —কাহার সম্বন্ধে ইহা বলা হয়েছে? উচ্চি ব্যণ্ডির ভাব পরিবর্তনের কি কি প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে? উল্কি ব্যক্তি কি সত্যই পাগল ছিলেন?

 

উত্তর। উত্তি ভিক্ষুকবেশধারী হেনরি নামক জনৈক ইংরেজ সম্পর্কে করা হয়েছে। হেনরির ভাব পরিবর্তনের দুটি প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে—প্রথমটি হেনরির আশ্রয়দাতার গিরিবালানাম্নী বালিকা-কন্যার সঙ্কটাপন্ন অবস্থার সময়ে। গিরিবালাকে হেনরি কন্যাবৎ স্নেহ করত। গিরিবালার অসুখের একটু বাড়াবাড়ি হলেই হেনরি প্রায় আহারনিদ্র ত্যাগ করে তার সেবাশুশ্রষা। করতে লাগল। রানীগঞ্জ থেকে প্রত্যহ যে এসিস্ট্যান্ট সার্জন গিরিবালার চিকিৎসার জন্য আসতেন, তার ওষুধ সম্পর্কে হেনরি শুধু সতর্ক দুই রাখত তাই নয়, নানা প্রশ্নে ভাণ্ডারকে উত্যও করে তুলত। একদা রোগীর অবস্থা অতি সঙ্কটাপন্ন হলে ডাক্তার রানীগঞ্জে না ফিরে রোগীর নিকট বসে ঘণ্টায় ঘণ্টায় নুতন নুতন ঔষধ দিতে লাগলেন। রাত্রি দুটার সময়ে ভাণ্ডার একটি নূতন ওষুধ তৈরি করে। দিতে উদ্যত হলে হেনরি তাতে বাধা দিয়ে বলল যে, ঐ ওষুধ দেওয়ার আধঘণ্টার মধ্যে রোগীর। দেহ শীতল হয়ে নিশ্চিত মৃত্যু হবে। রোগীর পিতার আদেশে হেনরির সাবধানবাণীতে কান না দিয়ে ডাণ্ডার সেই ওষুধ রোগীর উপর প্রয়োগ করার পরই দেখা গেল যে রোগীর দেহের উত্তাপ খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে। ডাণ্ডার ভয়ে মুখ শুকিয়ে বাহরে চলে গেলেন, রোগীর মাতা কেঁদে উঠলেন এবং পিতার হাত-পা অবশ হয়ে আসতে লাগল। তখন হেনরি ডাণ্ডারকে হত্যা করবার জন্য ছুটতে উদ্যত হলে পিতা তাকে রোগীকে বাঁচাবার ষ্টো করতে আদেশ দিলেন এবং রোগীর মাতাও শপথ করে জানালেন যে, গিরিবালা অর্থাৎ রোগীকে বাঁচাতে পারলে তিনি হেনরির হাতে গিরিবালাকে চিরতরে দান করবেন। এটা শুনে হেনরির মুখ আনন্দে পূর্ণ হল—এতক্ষণ তার মুখে যে দুশ্চিন্তা ও ক্রোধের ভাব প্রকাশ পেয়েছিল, তা মুহূর্তে অন্তর্হিত হল। তার এই দ্রুত মুখভাবের পরিবর্তন দেখে রোগীর পিতার মনে হয়েছে ‘লোকটা পাগল নাকি?

হেনরির দ্বিতীয়বার ভাবপরিবর্তনের প্রমাণ ইর কিছুদিন পরেই পাওয়া গেছে। গিরিবালার সম্পূর্ণ আরোগ্যলাভের পর হেনরি কুলির সর্দারি করা ছেড়ে দিয়েছে। কয়েকদিন পরে দেখা গেল সে অত্যন্ত অন্যমনস্ক, সর্বদাই স্নানমুখে কি যেন চিন্তা করছে, এমনকি দুইদিন হাভানা চুরুট ফুরিয়ে গেছে, সে কলকাতা থেকে আনাবের ষ্টো করে নি। গিরিবালার পিতা প্রশ্ন করলে হেনরি তাঁকে জানাল, ‘বাবু, আমি আমার ভূত জীবনের ইতিহাস ভাবি একটু একটু করে সব মনে পড়ছে। আমি মাঝে মাঝে পাগল হয়ে যাই, আবার ভাল হই। এবার আমার ভাল হবার সময় আসছে। গিরিবালার পিতা বিস্মিত হয়ে আরও অনেক প্রশ্ন করলেন, কিন্তু হেনরি আর একটি কথাও বলল না। ঠিক এই সময়ে গিরিবালা এসে হেনরিকে ডাকল–হেনরি স্নান ও গম্ভীরভাবে বসেছিল, গিরিবালার ডাক শোনামার বালকের মতো প্রফুল্ল ও চঞ্চল হয়ে গিরিবালার সঙ্গে গমন করল। তার এই দ্রুত ভাবপরির্তন দেখে গিরিবালার পিতার মনে হয়েছে, হেনরি ‘পাগলই বটে’।

হেনরির ঠিক যে সময়ের কথা বলা হয়েছে তখনো পর্যন্ত হেনরি সত্য সত্যই পাগল ছিল। তবে তার এই পাগল ভাব দীর্ঘকাল স্থায়ী থাকে না, ইহা তার একটি সাময়িক অবস্থা মাত্র। আসলে হেনরি হচ্ছে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টের একজন বিষ্টি সদস্য। স্যার হেনরি রবিনসনের উন্মাদ অবস্থা। বিগত দশ বৎসর থেকে রবিন্‌সন মাঝে মাঝে উন্মাদ হয়ে যায়, তখন সে নিজেকে পথের সামান্য একজন ভিক্ষুক বলে মনে করতে থাকে এবং ভিক্ষা করেই দিনাতিপাত করতে থাকে। এই পাগল অবস্থা কখনো ছয়মাস, আটমাস বা একবৎসর স্থায়ী হয়। তার আত্মীয়-স্বজনরা খুঁজে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনে। যখন রবিনসনকে নিয়ে আলোচ্য গল্পটি গড়ে ওঠে, তখন তার উম্মাদ অবস্থা চলছে—সে ভিখারীবেশে ভিক্ষার নিমিত্ত গিরিবালার পিতার কাছে প্রার্থী হয়ে দাঁড়ালে তিনি তাকে বাঙ্গালীর বেশভূষায় সজ্জিত করে তাঁর বাড়িতে আশ্রয় দেন। তিনি তাকে পাগল বলে সন্দেহ করেন নি বটে, কিন্তু হেনরি যখন তাঁকে জানাল যে সে মাঝে মাঝে পাগল হয়ে যায়, আবার সুস্থও হয়ে উঠে এবং বর্তমানে তার পাগল অবস্থা কেটে গিয়া সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থা ফিরবার সময় আসছে, তখন লেখকের মনে হল হেনরির কথাগুলি বোধহয় সত্য, অর্থাৎ সে তখনও পর্যন্ত পাগলই রয়ে গেছে। কেন না ভিখারীর বেশে থাকলেও সে যে সত্য সত্যই রাস্তার ভিখারী নয় তার প্রমাণ তিনি এই কয়েকমাসের মধ্যে অনেক পেয়েছেন। তা ছাড়া গিরিবালার প্রাণ-সংশয় উপস্থিত হলে হেনরি চিকিৎসাশাস্ত্রে তার অসাধারণ অধিকারের প্রমাণ দিয়েছে। তাতে গিরিবালার পিতার মনে এরূপ সন্দেহ দেখা দিয়েছে যে হেনরি অবশ্যই খুব বড় একজন চিকিৎসক ছিল, এখন পাগল হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া হেনরি নিজেও বলেছে যে সে মাঝে মাঝে পাগল হয়ে যায়, আবার ভালও হয়ে যায়। এখন তার ভাল হবার সময় এসেছে অর্থাৎ উন্মাদ অবস্থাতেই সে এখনও আছে। তবে সুস্থ হয়ে উঠবার সময় এসেছে। গিরিবালার পিতা হেনরির স্নানবিমর্ষ অবস্থা হতে গিরিবালার ডাকে উৎফুল্ল ও চঞ্চল হয়ে ওঠা দেখে বলিয়াছেন যে, স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে এত দ্রুত পরিবর্তন সম্ভবপর নহে, একমাত্র পাগলের পক্ষেই সম্ভব। সুতরাং প্রশ্নে উল্কি ব্যক্তি পাগলই বটে।

 

2. ভিখারী সাহেব গল্পটির নামকরণের সার্থকতা বিচার কর ।

 

উত্তর : ‘ভিখারী সাহেব’ গল্পটির অর্থ ভিখারী রূপী সাহেব অর্থাৎ যে সাহেব ভিখারী সেজেছে, তার গল্প। কিন্তু গল্পটি পড়তে পড়তে অনুভব করা যায় যে, ঐ সাহেবটি স্বেচ্ছায় ভিখারী সাজে নি, তার ভিখারী সাজার পশ্চাতে একটি করুণ ও মর্মস্পর্শী ইতিহাস আছে। ভিখারীতে রূপান্তরিত হইবার সেই হৃদয় বিদারক কাহিনীকে লেখক নিজে বর্ণনা করেন নি, স্ট্যান্ড ম্যাগাজিনের সম্পাদকের পত্র মারফত জানিয়েছেন। লেখক এক করুণ রসটিকে সহানুভূতির কৌতুক রসে মুড়ে পরিবশেন করেছেন। আসলে হেনরির ‘সাহেব’ সত্তাটির স্বরূপ উদ্ঘাটনই তাহার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। তাই প্রথম আবির্ভাবেই হেনরির ভিখারী বেশের মধ্যেও সাহেব জানোচিত ‘কলার, নেকটাই—অনুষ্ঠানের ত্রুটি কিছুই ছিল না”। এই প্রকৃত সাহেব সত্তাই হেনরিকে ‘খুব কাজের লোক’ করে তুলিয়াছে, মরণ্যোন্মুখ গিরিবালাকে রক্ষা করিতে সাহায্য করেছে, বাঙ্গালীর ঘৃণার স্বজাতির পাপের প্রায়শ্চিত করবার জন্য হেনরিকে বাঙ্গালী সাজতে অনুপ্রাণিত করেছে। ইংরেজ তখন এদেশের শাসনকর্তা-সুতরাং তাদের উপর ভারতীদের একটা প্রবল ঘৃণা ও বিদ্বেষ জেগে উঠেছিল। এই বিদেশী জাতির মধ্যেও যে মহত্ত্ব ও মানবিকতা আছে তা প্রকাশ করে পারস্পরিক জাতি বিদ্বেষ প্রশমিত করার প্রয়োজনীয়তা প্রভাতকুমার অনুভব করেছিলেন। ‘ভিখারী সাহেব’ গল্পে তিনি ইংরেজ জাতির মধ্যেও যে মহত্ত্ব আছে, অবস্থা বৈগুণ্যে ভিখারী হলেও তার স্বাভাবিক উদারতা ও মহানুভবতা যে বজায় থাকে, তাই দেখিয়েছেন সুতরাং গল্পটি সার্থকনামা সন্দেহ নেই।

 

3. ছোট গল্প হিসেবে ভিখারী সাহেব রচনাটি কতদূর সার্থক হয়েছে তাহা আলোচনা কর

 

উত্তর :

 

4. প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় ভিখারি সাহেব গল্পের আলোকে ভিখারীরূপী শেয়ার হেনরি রবিনসোনের চরিত্র চিত্র অঙ্কিত কর ।

 

উত্তর :

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *